নিরবিচ্ছিন্ন সুখ আমরা দুনিয়ার এ জীবনে কখনোই পাবো না ক্রমাগত বিপদ থাকবেই। বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে চলবে জীবন। একটা বিপদ পার হলে, আর একটা এসে হাজির হবে।
এভাবেই চলবে, আর বাড়বে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, শিখবো তার সাথে কথা বলার ভাষা।
প্রতি বার মনে হয়েছে কি ভাবে চাইলে, ডাকলে তিনি শুনবেন আমার কথা, পূর্ণ করবেন আমার চাওয়া। প্রথমেই খুঁজেছি কুরআনে বর্ণিত নবীদের দোয়া, কি ভাষায় তারা চেয়েছেন আল্লাহর কাছে।
অন্তর প্রশান্তকর সব কুরআনের ভাষা, আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার, নির্ভেজাল এক একটি বাক্য। বুঝেছি আমার এই বিপদ আমারই আল্লাহর অবাধ্যতার ফল।
তাই নিজের গুনাহের কারনে অনুতপ্ত আমি, ইউনুস (আ.) মত করে আল গাফ্ফার, পরম ক্ষমাশীলকে আহবান করি।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-য লিমীন।
"আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র-মহান, নিশ্চয় আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত।" [আম্বিয়া ২১/৮৭]
শোকর আদায় করি তার দেওয়া শত শত নিয়ামতের , তখন আইয়ুব (আ.) মত করে লজ্জিত কন্ঠে জানাই আমার বিপদের কথা সুস্থতা দানকারী, আশ-শাফিকে।
َرَبِّ أَنِّيْ مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرّٰحِمِيْن
রববাহু আন্নি মাস্ সানিইয়াদ্ব্ দ্বুর্রু ওয়া আন্তা আর্ হামুর্ রা-হিমি--ন্.
"হে আমার রব! আমি তো দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়েছি! আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াময়।" [সূরা আম্বিয়া: ৮৩]
আমি চিন্তিত, যখন দেখি কোন সাহায্য করি নাই তখন ইব্রাহিম (আ.) এর মত করে মনের কষ্ট জানাই, উত্তম অভিভাবক, আল ওয়াকিলকে।
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল। ’
‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী, কার্যসম্পাদনকারী। [৩:১৭৩]
যখন নিজেকে দুর্বল ভাবি তখন সমস্ত শক্তির একমাত্র উৎস আল-ক্বওিইয়্যু শক্তিশালী সব কিছু ঠিক করে দিবেন বলে জানি।
‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।
‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই, কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই।’
‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’-এর পাঠে জান্নাতে ধনাগার লাভ হয়। যাতে রয়েছে বান্দার যাবতীয় কল্যাণ। (বুখারি)
আল্লাহ ভালোবাসেন তার সুন্দর সুন্দর নাম ধরে তার প্রশংসা করি, তারবি তাসবিহ করি তার সুন্দর নামের।
ﻳﺎﺫﺍ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ
ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম
"হে বড়ত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্মান ও বদান্যতার অধিকারী।" (তিরমিযি)
অপেক্ষায় থাকি বিভিন্ন প্রহরের।
আযানের পরের দোয়া কবুল হয়, কবুল হয় আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়কার দোয়া, বৃষ্টির সময়, জুমাবারে আসরের পরে আর বুধবার জোহরের পরের দোয়া। এই সুন্দর মুহুর্ত গুলো মিস করতে চাই না আল-মুহাইমিন আমার অভিভাবক, আমার প্রতিপালকের কাছে না চেয়ে।
তাহাজ্জুদের নামাযের দোয়া তো এক লক্ষ্য ভেদ্য তীর।
রাতে যতবার ঘুম ভেঙ্গে যায় ততবারই এই দোয়া পড়ে সব মনের ব্যাকুলতা জানাই আল-ক্ববিদ় সরলপথ প্রদর্শনকারীর কাছে।
রাসুলুল্লাহﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলে,
“লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্’দাহ লা-শারীকালাহু,... ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আ’লিয়্যিল আ’যীম। রাব্বিগফির লী।”
তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদি সে কোন দুয়া করে, তবে তার সেই দুয়া কবুল করা হবে। যদি সে উঠে ওযু করে নামায পড়ে, তবে তার নামায কবুল করা হবে।” (বুখারী)
ঘরের বাইরে বের হলেই ভাবি আমি সফরে আছি চলে আল-ক্বদির সর্বশক্তিমানের কাছে চাইতে থাকা।
মনে পরলেই পড়তে থাকি দোয়া কবুলের জন্য সুরা ফাতেহা আর সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আর আল-বাসী়র সর্বদ্রষ্টার কাছে ব্যক্ত করি নেক আশা, বিশ্বাস দোয়া পূরন হবে ইন শা আল্লাহ।
নামায শেষে ভিখারীর মত হাত পাততে নিষেধ নাই তাই দু হাত তুলে চাইতে থাকি মালিকুল মুলকের কাছে।
কুরআন খতমের করার জন্য অপেক্ষা করি না। যখনই যত বার যত টুকু পড়ি, পড়া শেষে মুনাজাত কাঁদি আল-হ়ামীদের কাছে, বিশ্বাস তিনিই আমার ব্যথিত অন্তরকে শান্তি সুখের নূর দ্বারা পুলোকিত করবেন।
নামায আল্লাহর কাছে সব চেয়ে পছন্দনীয় আমল তাই ৫ ওয়াক্ত নামাযের সাথে সেই সমস্যার কথা মনে করে বারতি ৪/৬ রাকাত নফল নামাযে কথোপকথন চলে আস-সালামের সাথে।
দোয়া চাই মার কাছে, শ্বাশুড়ির কাছে তাদের সন্তানের সব রকম কল্যানের জন্য তারা যেন আস সামীর কাছে ফরিয়াদ করেন।
দোয়া করতে বলি দেখা, অদেখা প্রিয় জনকে, তারা যেন আল-মুজীবের কাছে আবেদন করে আমাদের বিপদ উদ্ধারের জন্য।
রোজা রেখে ইফতারের আগে শুধু দোয়ার জন্য অপেক্ষা করি না এই কথোপকথন চলতে থাকে সারা দিনভর তিনি আল-হাফিয, হিফাযতকারীর কাছে।
যখনই সুযোগ হয়েছে মোরগের ডাক শুনার সাথে সাথে জ্ঞাপন করেছি মনের খবর আল-খলিক্বের কাছে।
মনে প্রশান্তি না আসা পর্যন্ত চলতে থাকে আর-রহ়মান, আর-রহ়ীম সবচাইতে ক্ষমাশীলের কাছে ক্ষমা যাচ্ঞা করা শত সহস্র বার।
আশ্রয় প্রার্থনা করি এই বলে,
:«اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ» . رواه مسلم
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন যাওয়া-লি নি’মাতিকা অতাহাউবুলি আ-ফিয়াতিকা অফুজাআতি নিক্বমাতিকা অজামী-ই সাখত্বিক।’
হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহের অপসরণ, নিরাপত্তার প্রত্যাবর্তন, আকস্মিক পাকড়াও এবং যাবতীয় অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসলিম ২৭৩৯)
যত ভাবে দোয়া করেছি নিচের দোয়া টি বলে বলেছি তিনি যেন আমল গুলো কবুল করে তার বিনিময় দান করেন,
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
রাব্বানা- তাকাব্বাল্ মিন্না--- ইন্নাকা আন্তাস্ সামী-‘উল ‘আলী---ম্। ওয়াতুব্ ‘আলাইনা--- ইন্নাকা আন্তাত্ তাওওয়া-বুর্ রাহি---ম্। হে আমাদের রব! আমাদের থেকে আপনি কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু। [২:১২৭-১২৮]
লেখাঃ ইসমাত নাইয়ারা (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments