জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত

জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত

বেশকিছু দিন যাবত সূর্যের প্রখর রোদে চারপাশটা যেন মরুভূমির ন্যায় রূপধারণ করেছে। নেই কোন শীতল বাতাস। কি যে অসহ্যকর তাপমাত্রা তা আমাদেরকে আরও বেশি হেস্তনেস্ত করে দিচ্ছে।

প্রখর তাপমাত্রায় সারাদিনের নানান ব্যাস্ততায় আমরা এই গরম থেকে কিছুটা অবসর নিতে চাই। তাপমাত্রার প্রভাবে আমরা কত পানীয় পান করে থাকি যেন কিছুটা ক্লান্তি দূর হয়। অনেকেই এসি রুমে আরাম উপভোগ করি।

দুনিয়ার সামান্যতম এই গরম আমরা সহ্য করতে পারি না। অথচ জাহান্নামের তুলনায় দুনিয়ার তাপমাত্রা কিছুই না। আমরা সারাদিনে অসংখ্য পাপ কাজ করতেছি। কিছু পাপ জেনেশুনে আবার কিছু পাপ নিজের অজান্তেই। আমাদের এই পাপের বুঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে।সময় থাকতে তা শুধরানো দরকার। কখন যে আজরাইল এসে হাজির হয় তার কোন ঠিক নেই।

আমরা যদি প্রতিদিন নিজ আমল এবং পাপ এর হিসাব করি তাইলে দেখা যাবে হাজারো পাপের নিচে অল্পসংখ্যক আমল মাত্র।

এই পাপের ফলস্বরূপ জাহান্নাম যেন প্রস্তুত।

فَرِحَ الۡمُخَلَّفُوۡنَ بِمَقۡعَدِہِمۡ خِلٰفَ رَسُوۡلِ اللّٰہِ وَ کَرِہُوۡۤا اَنۡ یُّجَاہِدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ قَالُوۡا لَا تَنۡفِرُوۡا فِی الۡحَرِّ ؕ قُلۡ نَارُ جَہَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا ؕ لَوۡ کَانُوۡا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۸۱﴾

"পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসূলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হল, আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না’। বল, ‘জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত’। (আত-তাওবাহ, আয়াত : ৮১)

[১] আয়াতে উল্লেখিত (مخلفون) শব্দটি (مخلف) এর বহুবচন। অর্থ- “পরিত্যক্ত'। অর্থাৎ যাকে পরিহার করা ও পিছনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী] এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এরা নিজেরা একথা মনে করে আনন্দিত হচ্ছে যে, আমরা নিজেদেরকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিতে পেরেছি এবং জিহাদে শামিল হতে হয়নি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা'আলা তাদের এহেন সম্মান পাবার যোগ্য মনে করেননি। কারণ তারা হয় মুসলিমদের ক্ষতি করত না হয় তাদের অন্তর অপবিত্র হওয়ার কারণে জিহাদের সৌভাগ্য তাদের নসীব হয়নি। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] কাজেই এরা জিহাদ ‘বর্জনকারী’ নয়; বরং জিহাদ থেকে বর্জিত’। কারণ, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বর্জনযোগ্য মনে করেছেন। [কুরতুবী]

[২] আয়াতে উল্লেখিত (خلاف) শব্দের দুটি অর্থ হতে পারে, একঃ পেছনে বা পরে, আবু ওবায়দা রহমাতুল্লাহ আলাইহি এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। তাতে এর মর্মার্থ দাঁড়ায় এই যে, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিহাদে চলে যাবার পর তাঁর পেছনে রয়ে যেতে পারল বলে আনন্দিত হচ্ছে যা বাস্তবিক পক্ষে আনন্দের বিষয়ই নয়। দ্বিতীয় অর্থ এক্ষেত্রে (خلاف) অর্থ (مخالفت) তথা বিরোধিতাও হতে পারে। অর্থাৎ এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরোধিতা করে ঘরে বসে রইল। আর শুধু নিজেরাই বসে রইল না; বরং অন্যান্য লোকদেরকেও এ কথাই বুঝাল যে, “গরমের সময়ে জিহাদে বেরিয়ো না”। [বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর; জালালাইন: ফাতহুল কাদীর]

[২] একথা পূর্বেই জানা গেছে যে, তাবুক যুদ্ধের অভিযান এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছিল, যখন প্রচন্ড গরম পড়ছিল। [ইবন কাসীর] আল্লাহ তা'আলা তাদের এ কথার উত্তরদান প্রসঙ্গে বলেছেন-

(قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا)

অর্থাৎ এই হতভাগারা এ সময়ের উত্তাপ তো দেখছে এবং তা থেকে বাঁচার চিন্তা করছে। মূলত এর ফলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের না-ফরমানীর দরুন যে জাহান্নামের আগুনে সম্মুখীন হতে হবে সে কথা ভাবছেই না তাহলে কি মওসুমের এ উত্তাপ জাহান্নামের উত্তাপ অপেক্ষা বেশী? জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, তোমাদের এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তরভাগের একভাগ বলা হল যে, হে আল্লাহর রাসূল! এতটুকুই তো যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ আগুনের চেয়েও সেটা উনসত্তর গুণ বেশী, প্রতিটির উত্তাপই এর মত [বুখারী: ৩২৬৫; মুসলিম: ২৮৪৩] 

জাহান্নামের আগুনের আরও আন্দাজ পাওয়া যায় এ হাদীস থেকে, যাতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে হাল্কা আযাব কিয়ামতের দিন যার হবে, তার আগুনের দুটি জুতা ও পিতা থাকবে, কিন্তু তার উত্তাপে তার মগজ এমনভাবে উৎরাতে থাকবে যেমন পাতিল উনুনের তাপে উতরায়। সে জাহান্নামীদের কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিপ্রাপ্ত মনে করবে না। অথচ সে সবচেয়ে হাল্কা আযাবপ্রাপ্ত। [বুখারী: ৬৫৬২; মুসলিম: ২১৩]


আমরা নিজেদের অপকর্মের দিক বিন্দুমাত্র নজর দিই না। যদি গুনাহের প্রতি কঠোর নজর দিতাম তাইলে অবশ্যই নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে পারতাম ইন শা আল্লাহ।

"আর এই দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখিরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন যদি তারা জানত"। (আল-আনকাবূত, আয়াত : ৬৪)

নিছক এই দুনিয়ার পিছনে অতি মূল্যবান সময় গুলি নষ্ট না করে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমল করি এবং তার নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করি এতে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় কল্যাণকর হবে ইন শা আল্লাহ।

প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন আসুন আমরা তাওবা করে ফিরে যাই আপন রব্বের দিকে যিনি পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু।

লেখাঃ রাশেদুল হাসান মামুন (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

0 Comments