মুসলিম ভাইয়ের/বোনের সম্পর্ক তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে না রাখা ! কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে রাখা বৈধ নয়; তাদের উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ হয়, তখন একজন এ দিকে এড়িয়ে যায়, আরেকজন ঐ দিকে এড়িয়ে যায়; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সে-ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে।” (বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৮৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৯৭)
তিনি আরও বলেন: “আর তোমরা পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।” (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১)
মুসলিম ভাই/বোনের গীবত না করা, অথবা তাকে হয়ে প্রতিপন্ন না করা, অথবা তার দোষ বর্ণনা না করা, অথবা তাকে উপহাস না করা, অথবা তাকে বিকৃত নামে না ডাকা, অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য তার কোনো কথা ফাঁস না করা। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক। কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর।”(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা, যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম।”(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলেন: তুমি তোমার ভাইয়ের এমন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা কর, যা সে অপছন্দ করে। বলা হল: আপনার কী অভিমত, আমি যা আলোচনা করলাম, তা যদি তার মধ্যে থেকে থাকে? তিনি বললেন: যেসব দোষ তুমি বর্ণনা করেছ তা যদি সত্যিই তার মধ্যে থেকে থাকে, তবেই তো তুমি তার গীবত করলে; যদি সেসব দোষ তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে।” (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৮)
আর তিনি বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেন: “নিশ্চয়ই তোমার পরস্পরের রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম ও সম্মানের যোগ্য, তোমাদের আজকের এ দিনের সম্মানের মতই।” (বুখারী, হাদিস নং- ১০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৪৭৭)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অপর সব মুসলিমের জন্য হারাম।” (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬)
তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় প্রতিপন্ন করে।”(মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬)
তিনি আরও বলেন:
“চোগলখোর তথা পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (বুখারী, হাদিস নং- ৫৭০৯; মুসলিম, হাদিস নং- ৩০৪)
অন্যায়ভাবে তাকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় গালি না দেওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া পাপ এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী, হাদিস নং- ৬৬৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ২৩০)
তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তি যেন অপর কোনো ব্যক্তিকে ফাসেক অথবা কাফির না বলে; কারণ, সে ব্যক্তি যদি প্রকৃতই তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ অপবাদ তার নিজের ঘাড়ে এসে পড়বে।” (বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৯৮)
তিনি আরও বলেন: “পরস্পরকে গালি প্রদানকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে যে আগে গালি দিয়েছে, সে দোষী বলে গণ্য হবে, যতক্ষণ না নির্যাতিত ব্যক্তি (অর্থাৎ প্রথম যাকে গালি দেয়া হয়েছে) সীমা অতিক্রম করবে।” (মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৬)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমরা মৃতদেরকে গালি দিয়ো না; কারণ, তারা যা কিছু করেছে, তার ফলাফলের কাছে পৌঁছে গেছে।” (বুখারী, হাদিস নং- ১৩২৯)
তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।”(বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩)
তাকে হিংসা না করা, অথবা তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ না করা, অথবা তাকে ঘৃণা না করা, অথবা তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি না করা। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না।”(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীগণ তাদের নিজেদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করল না।” (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৯৭)
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতার সামনে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বলবে না, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করো না এবং পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।”(মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১)
তিনি আরও বলেন:
“সাবধান! তোমরা অযথা ধারণা করা থেকে বিরত থাক; কেননা, অযথা ধারণা পোষণ করা সবচেয়ে বড় ধরনের মিথ্যা।”(বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৪৯)
সমাপ্ত
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments