“আমার ছোটো ছেলেটার বয়স সাত বছর। ছোটোবেলা থেকেই তাকে আমি ইসলামের বেসিক ধারনা গুলো দিয়ে আসছি। তাকে আমি বারবার বুঝিয়েছি — এই সৃষ্টি জগতে আল্লাহ (সুবঃ) যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ আছে। একদিন সে আমাকে প্রশ্ন করলো — আব্বু, কাক কেন সৃষ্টি করা হলো? আমি তাকে বললাম — কাক পরিবেশ থেকে বিভিন্ন ময়লা খেয়ে ফেলে। এতে আমাদের অনেক উপকার হয়। সে উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হলো।
একদিন সে হঠাৎ করে এসে আমাকে এমন একটা প্রশ্ন করে বসে, যেটার উত্তর আমার কাছে ছিলো না। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো - আচ্ছা আব্বু, উঁকুন কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? তখন আমি খানিকটা হতভম্ব হলাম। আসলেই তো? উঁকুন কেন সৃষ্টি করা হলো। আমি তাকে সেদিন কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
পরদিন সন্ধায় সে আবার আমার কাছে আসে। এসে বলে — আব্বু, উঁকুন কেন সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি এর একটা উত্তর বের করেছি। ততক্ষনে আমি গতকালকের ব্যাপারে ভুলেই গিয়েছিলাম। অথচ তার এখনো মনে আছে। কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলাম — কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? সে বললো — আমাদের মাথায় উকুন হওয়ার ভয়ে আমরা যাতে মাথা আচড়াই, চুল পরিষ্কার রাখি, সেজন্যই আল্লাহ উঁকুন সৃষ্টি করেছেন।
সুবহানাহু। আসলেই তো? মাথায় যদি উঁকুন যদি না হতো, আমরা হয়তো চুল পরিষ্কার করতাম না, চুল আচড়াতাম না। তার সাত বছর বয়সে এইরকম চিন্তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সাথে সাথেই মন ভরে দুআ করলাম তার জন্য, আল্লাহ যাতে তাকে একজন মুফাসসির বানিয়ে দেন।”
শাইখের এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছুই আছে। আমাদের বাচ্চাদেরকে ছোটোবেলা থেকেই ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই বাচ্চার মনে গেঁথে দিতে হবে — ইসলামের চেয়ে সুন্দর জীবনব্যবস্থা আর হতে পারেনা। তার মনে তখন একটা সুধারনা থাকবে ইসলাম নিয়ে। শাইখের বাচ্চার কথাই ভাবুন না। তিনি তাঁর বাচ্চাকে শিক্ষা দিয়েছেন — আল্লাহ সবকিছুই কোনো না কোনো কল্যানে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার চিন্তা টা কল্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সে এইজন্যই ভেবেছিলো — যেহেতু আল্লাহ সব কিছু কল্যানের জন্যই সৃষ্টি করেছেন, তার মানে উঁকুনের সৃষ্টির পেছনে কোনো না কোনো কল্যান আছে। সে কোনো নেগেটিভ দিক নিয়ে চিন্তাই করেনি। কারন, তাকে শিক্ষা দেয়া হলো — পজেটিভ দিকটা।
ছোটো থেকেই আপনার বাচ্চাকে ঠিক সেভাবে শিক্ষা দিন, যেভাবে লোকমান তাঁর বাচ্চাকে বলেছিলেন,
ﻳٰﺒُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎ ﻟﻠّٰﻪِ ۗ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَـﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴْﻢٌ
"অর্থাৎ হে আমার ছেলে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক করো না, শিরক হচ্ছে অবশ্যই বিরাট যুলম।" [সুরাহ লুকমান, আয়াত : ১৩]
তাকে শিখিয়ে দিন — শিরক না করতে। তাকে জিজ্ঞাসা করুন - তোমাকে কে বানালো? আব্বুকে কে বানালো? ভাইকে কে বানালো? এবং উত্তর গেঁথে দিন তার অন্তরে।
আর যদি আপনার সন্তানকে আপনি দ্বীন থেকে কয়েক মাইল দূরে রাখেন, স্পীকারে গান ছেড়ে দিয়ে যদি তাকে বলেন — বাবু একটু নাচো তো দেখি, তাহলে আপনার বাচ্চা থেকে আপনার আশা করার মতো কিছু থাকবেনা। বাচ্চারও আখিরাত নষ্ট করলেন, নিজেদেরটা তো করলেনই। দিনশেষে এই বাচ্চাই হয়তো কোনো ক্যাসিনোর মালিক হবে, কিংবা হবে কোনো জুয়াড়ি কিংবা কোনো ধর্ষক। হতেও তো পারে৷ এর গ্যারান্টি কি? আর হবেই বা না কেন? আপনার বাচ্চাকে তো আপনি শিখানই নি যে — এই দুনিয়ায় সে একজন মুসাফির, একজন আগন্তুক।
সমাপ্ত
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments