আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি

আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি

শুধু তোমারই ইবাদত করি...

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা ১০৪ টি আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। সেই সবগুলো কিতাবের সারাংশ হলো কুরআন, আর সম্পূর্ণ কুরআনের সারসংক্ষেপ পাওয়া যায় সূরাহ ফাতিহায়। আর সম্পূর্ণ সূরাহ ফাতিহার সারাংশ হলো এই আয়াত,

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

"আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং কেবল তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।" (সূরাহ ফাতিহা, আয়াত : ৪)

আল্লাহর রহমত ও সর্বময় পরম ক্ষমতার বিষয়ে জানার পর, এবং তারই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেকথা উপলব্ধি করার পর, এই আয়াতটি আমাদের জানিয়ে দেয় এই পৃথিবীতে আমাদের কি করণীয়, আমাদেরকে কোন উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, সেটা হলো – কেবল আল্লাহর ইবাদত করা আর এই ইবাদাহর কাজেও তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করা।

ইবাদাহ শব্দটি আরবী ‘আব্দ’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ দাস, গোলাম। দাস বলতে আমরা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদীদের নির্যাতনের দৃশ্য মনে করি। এটা জুলুমবাজিদের কারণে খারাপ মনে হয়। কিন্তু আল্লাহর দাস হওয়াটাই বরং সৌভাগ্যের বিষয়। দুনিয়ার প্রচলিত দাস আর আল্লাহর দাসের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আল্লাহর দাস হলে সে আল্লাহকে ছাড়তে চায় না, বরং এই প্রভু-দাসের ভালোবাসা এতটাই মধুময় যে দাস আরো প্রভূর নিকটে এসে চিরন্তন আত্মিক প্রশান্তি পায়, আত্মার খোরাক পায়।

প্রশ্ন আসে, ইবাদাত ও দাসত্বের মাঝে সম্পর্ক কি? উত্তর হলো, বান্দার দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ হলো ইবাদাহ। বান্দার ইবাদাহ-ই হলো দাসত্বের প্রমাণ। একজন ব্যক্তির নিষ্ঠা ও অন্তরের ঐকান্তিকতা প্রমাণ করে তার দাসত্ব। ইবাদাহ না করলে তাঁর বান্দাহ হওয়া যায় না।

এখানে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার, সেটা হলো ইবাদাহ কারা করে? আমরা। আমরা তো বহুবচন এবং আরবীতে বহুবচনই আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ফরজ নামাজ ব্যতীত আমরা তো একাই নামাজ পড়ি, তবে কেন সূরা ফাতিহায় বহুবচন? আলেমরা বলেছেন, ঐক্যের গুরুত্বের দিক! আল্লাহ ঐক্যের প্রতি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে সর্বাপেক্ষা সেরা সূরা, পুরো কুরআনের মূল সূরা, পুরো ইসলাম যেই সূরায় বর্ণিত হয়েছে, সেই সূরায় আল্লাহ তায়ালা ঐক্যের গুরুত্বের কথা তুলে এনেছেন তাঁর ইবাদাহতে।

এমনকি একা নামাজ পড়লেও সবার জন্য দু’আ করি যে আমরা তোমারই ইবাদাহ করি সকলেই। সকলেই তোমার সাহায্য কামনা করি। অর্থগতভাগে বহুবচন তো রয়েছেই, আবার শব্দগতভাবেও তাকিদ বা গুরুত্ব রয়েছে।

তাহলে আমরা ঐক্য কীভাবে বজায় রাখতে পারি? সেটাই আল্লাহ বলছেন, ইবাদাহর মাধ্যমে। একারণেই যেসব পরিবারের লোকেরা একত্রে ইবাদাহ করে তারা একত্র থাকে, মিলেমিশে থাকে, শান্তিতে অবস্থান করে। যেসব সমাজের লোকেরা একত্রে ইবাদাহ করে, তারা একত্রে থাকে আর যেসব সমাজের লোকের একত্রে ইবাদাহ করে না তারা বিভিন্নভাবে বিভক্ত, শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

আমরা আল্লাহর ইবাদাহর মাধ্যমেই কেবল হিসেব বা প্রতিদান দিবসে মুক্তি পেতে পারি। এই মুক্তির জন্য অন্যান্য লোকেদের সাথে নিয়ে আরো উত্তমভাবে ইবাদাহ করতে পারি এবং সফল হতে পারি।
সমাপ্ত

লেখাঃ শায়খ আব্দুন নাসির জাংদা (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

0 Comments