সে প্রথমে সাজাহ্ নামের এক ভণ্ড মহিলা নবির ওপর ঈমান আনে। ওই মহিলার জন্য সাবাছ আজান দিত। পরে সেখান থেকে সে তওবা করে। তারপর ন্যায়পরায়ণ খলিফা উসমান (রা) এর বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করে আর তাকে হত্যা করায় অংশ নেয়। পরে সে তওবা করে।
এরপর আমিরুল মুমিনীন আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে সে খারেজিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তবে দ্রুত সে তওবা করে আলী (রা)-এর শিবিরে চলে আসে।
এখানেই শেষ না। এরপর সে এমন সৈন্যদের দলে যোগ দেয়, যারা হুসাইন (রা)-কে হত্যা করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে সাবাছ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলে। যারা হুসাইন (রা)-এর হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছিল, তাদের দলে সে যোগ দেয়।
গল্প আরও আছে। এরপর সাবাছ মুখতার ইবনে উবাইদুল্লাহর অনুসারী হয়ে যায়। পরে সে তওবা করে। আর যারা মুখতারের বিপক্ষে যুদ্ধ করছে তাদের দলে যোগ দেয়।
সাবাছের গল্প থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
আমরা বুঝতে পারি, কেউ নিজেকে যদি বারবার ফিতনার কাছে নিয়ে যায়, তবে প্রতিবারই সে বড় রকমের ভুল করে ফেলতে পারে। নিজের ঈমানকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।
শেষ সময়ে মানবজাতি যে ফিতনার সম্মুখীন হবে সেটির কথা বলতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ، فَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا، فَلْيَعُذْ بِهِ
“যে ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আত্মরক্ষা করে।”
এ কারণেই শুধু ব্যভিচার না, ব্যভিচারের ধারেকাছে যেতেও আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও বাজে পথ।”
তবে আমাদের কুযুক্তির তো শেষ নেই। কেউ বলতেই পারে :
“আরে! শুধু কৌতূহল থেকে দেখেছি। তেমন কিছু না।”
“আমি তো শুধু সবার মতামতটা জানতে চেয়েছি।”
“এসব না দেখলে, না জানলে সতর্ক হব কীভাবে?”
“আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে। এসবে আমার সমস্যা হয় না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি।”
আর এরপর কিছু বুঝতে পারার আগেই ফিতনা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। সেখান থেকে আর বের হতে দেয় না। সে ডুবে যায় গুনাহের সাগরে।
আর এখন তো ফিতনায় পা পিছলে যাওয়া যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক সহজ। আমরা চাইলেই এখন যেকোনো জায়গায় চলে যেতে পারি। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যা ইচ্ছা বলতে পারি। দেখতে পারি। তবে যারা নিজের ঈমান সম্পর্কে সচেতন, নিজের আখিরাত সম্পর্কে সচেতন, তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহার গুরুত্ব বোঝে। ফিতনা থেকে গা বাঁচিয়ে চলে। সেটা হতে পারে :
কোনো ফিতনাযুক্ত অনলাইন ওয়েবসাইট ভিজিট করা। কোনো মুসলিমের স্ক্যান্ডাল ঘাঁটতে যাওয়া। এমন কিছু দেখা যা নিজের ঈমানকে নাড়িয়ে দেয়।
এমন কিছু সামনে এলেই চোখ বন্ধ করে ফেলুন। দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যান। ভবিষ্যতে যাতে এমন কিছু সামনে না আসতে পারে সে ব্যবস্থা করুন। ফিতনা থেকে দৌড়ে পালান। জেনে রাখবেন, এসব থেকে দূরে থাকলেই সফল হওয়া যায়। ভালো থাকা যায়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ
“যাকে ফিতনা থেকে দূরে রাখা হলো, সে-ই তো সৌভাগ্যবান হলো।”
নিজের ঈমানকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। এ পরীক্ষায় ফেল করলে কিন্তু মহাবিপদ।
সমাপ্ত
লেখাঃ শিহাব আহমেদ তুহিন (আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments