কেউ কেউ যখন ভুল বুঝতে পারে তা শুধরে নেয়

 

কেউ কেউ যখন ভুল বুঝতে পারে তা শুধরে নেয়
 কেউ কেউ যখন ভুল বুঝতে পারে তা শুধরে নেয়


কেউ কেউ যখন ভুল বুঝতে পারে— তা শুধরে নেয়। আবার কেউ নিজের ভুলের ওপর— গোঁ ধরে বসে থাকে। মনে করে যে ভুল স্বীকার করা ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী। হয়তো এর কারণে নিজের সম্মানহানি হবে। অথচ, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। মানুষ ভুল করবে; এটাই স্বাভাবিক।


হাদিসে এসেছে — ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীরা উত্তম।’


‘আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ করে দিন।’ এইটুকু কথায় লুকিয়ে থাকা সব ক্ষোভ জড়িয়ে করে দিতে পারে মুহূর্তে-ই। কিন্তু, সমাজে ভুল স্বীকার করার মানুষ খুব কম। অথচ, এই অনুশোচনায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মহত্বের প্রকাশ ঘটে।


তাই ভুল হলে আন্তরিকতার সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। একদা আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.)- এর মধ্যে বিতর্ক হলো, আবু বকর (রা.)- এর কোনো কথায় ওমর (রা.) রাগান্বিত হন। এবং রাগান্বিত অবস্থায় ওমর (রা.) সেখান থেকে চলে গেলেন।


আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু নিলেন, কিন্তু ওমর (রা.) ক্ষমা করলেন না। বরং তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.) -এর দরবারে এলেন।


আবু দারদা (রা.) বলেন, আমরা তখন প্রিয় রাসুল (সা.) -এর কাছে ছিলাম, ঘটনা শোনার পর প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের এই সঙ্গী আবু বকর আগে কল্যাণ লাভ করেছে।’ তিনি বলেন, এতে ওমর লজ্জিত হলেন এবং সালাম করে রাসুল (সা.)-এর পাশে বসে পড়েন। সব কথা রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, এতে রাসুল (সা.) অসন্তুষ্ট হলেন। আর আবু বকর (রা.) বারবার বলছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি বেশি দোষী ছিলাম।’


পুনরায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথির ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? তোমরা আমার খাতিরে আমার সঙ্গীর ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? এমন একদিন ছিল যখন আমি বলেছিলাম, হে লোকসকল! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসুল, তখন তোমরা বলেছিলে, তুমি মিথ্যা বলেছ আর আবু বকর (রা.) বলেছিল, আপনি সত্য বলেছেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৬৪০]


ভুল স্বীকার করা এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া। আর এর দায়ভার মেনে নেওয়া। কোনো মাধ্যম ব্যতীত যার সঙ্গে ভুল হয়েছে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করা। আর প্রকাশ্যে ভুল করলে প্রকাশ্যে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কারো প্রতি দায়ভার না চাপিয়ে নিজেই সব মেনে নেওয়া। নিজের ভুল স্বীকার করতে গিয়ে আকার-ইঙ্গিতে কাউকে দোষারোপ না করা।


ভুল যদি নিজের অজান্তে হয়ে থাকে তাহলেও তা মানুষের সামনে স্পষ্ট করা। ইন শা আল্লাহ, এর দ্বারা আপনার সম্মান বৃদ্ধি হবে। তবে বারবার যেন একই ভুল করা থেকে পূর্ণ সতর্ক থাকা, নয়তো এর কারণে মানুষের মধ্যে আপনার তথা ওজন কমে যাবে। উল্টো আপনি হবেন হাসির পাত্র।


কৃত ভুলের কারণে যদি কোনো সংকট তৈরি হয় তা মেনে নিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা। এ ক্ষেত্রে কোনো তিরস্কারের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করা। তার সঙ্গে অহেতুক তর্কে না জড়ানো; বরং অনুশোচনা প্রকাশ করা।


ভুল স্বীকার করা নবীদের বৈশিষ্ট্য ছিল। অথচ তাঁরা ছিলেন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁরা আমাদের জন্য নমুনা হিসেবে রেখে গেছেন ভুল স্বীকার মানুষের মর্যাদাকে ছোট করে না।


আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আ —মিন।


লেখাঃ সৈয়দ মুকসিত (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)


পোস্ট রেটিং করুন

পরবর্তী পোষ্ট

সম্পর্কিত পোস্টসমূহ

Facebook