কেউ জানবে না মানুষটা আসলে বাঁচতে চেয়েছিল!


কেউ জানবে না মানুষটা আসলে বাঁচতে চেয়েছিল!

পৃথিবীতে যত মানুষ রাগের মাথায় কিংবা ঠাণ্ডা মাথায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে; এরা প্রত্যেকেই একটা পর্যায়ে এসে শ্বাসকষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাঁচার চেষ্টা করে। সে যদি তার এই মৃত্যুযাত্রার কোন ভিডিও রেকর্ড করে এই কাজটি সম্পন্ন করত তাহলে পৃথিবীর মানুষ দেখতে পেত; মরে যেতে চাওয়া এই মানুষটা কিভাবে বাঁচতে চেয়েছিল।

উঁচু ব্রিজ থেকে লাফ দেয়ার কাজটা সে ঝোঁকের বসে করে ফেলে। অক্সিজেনের অভাবে যখন তার দম বন্ধ হয়ে আসে তখনই তার হুশ ফিরে। একটা গাছের পাতা পেলেও সেটাকে দু হাতে আকড়ে ধরে ভেসে থাকতে চায়।

পায়ের নিচে এক দানা বালুর স্পর্শ পেলেও সেটার উপর ভর দিয়ে এই যাত্রায় বেঁচে যেতে চায়। ডুবে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে একবার মাথা উঁচিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকায়। সবাই জানবে মানুষটা মরতে চেয়েছিল ! আসলে মানুষটা বাঁচতে চেয়েছিল মরে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে!

হুট করে গায়ে কেরাসিন দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়াটা সহজ। আগুনে যখন চোখ, মুখ, জিহ্বা পুড়ে পুড়ে ধোঁয়া বের হয় কিংবা মাথার ভেতরে মোগজ গলতে থাকে তখন তাদের হুশ ফিরে আসে।

সামান্য মোমের আগুনে ৩০ সেকেন্ড আঙুল দিয়ে রাখতে পারো না; তুমি কীভাবে চামড়ার ভেতরে শিরায় শিরায় দাউ দাউ আগুন সহ্য করবে ? তাদের এই সহ্য করার ব্যাপারটি এখানেই শেষ না। মাত্র শুরু। দুই মিনিটের আবেগ কন্ট্রোল করতে না পারার পরিণতি যে কী ভহাবহ তা ক্বুরআন ও হাদীস হতে স্পষ্ট এবং তার ঠিকানা অবশ্যই জাহান্নাম।

মরে যেতে চাওয়া এই সব মানুষগুলো চরম অভিমানি। রাগ, হতাশা, আবেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে একটা কিছু করে বসে। তারা মনে করে বেঁচে থেকে শুধু শুধু কষ্ট পাবার কোনই মানে হয় না; বিশ্বাস করুন,তারা প্রত্যেকেই মরে যাবার আগ মুহূর্তে বাঁচার জন্য ছটফট করে। মোরগ জবাই করার পর ড্রামে রেখে ঢাকনা লাগিয়ে দিলে দেখবে ড্রামটা নড়ছে। ভেতর থেকে ছটফট শব্দ হচ্ছে। বোকা মানুষগুলো নিজেরাই নিজেদের জবাই করে ড্রামের ভেতর বসে ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। বাইরে থেকে একটু আধটু শব্দ হবে। ড্রামটা হয়ত কিছুক্ষণ নড়বে। কেউ জানবে না মানুষটা আসলে বাঁচতে চেয়েছিল। কেউ না! এটাই চরম বাস্তবতা! সুতরাং, আবেগকে প্রশ্রয় দিবেন না.. না হয় আপনার দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই বরবাদ হয়ে যাবে!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেছেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০]

অন্যত্র বলেছেন, ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [সূরাহ আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫]

প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ [বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০]

তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। [বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯]

তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’ [ইবনে হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১]

তিনি (ﷺ) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [স্বহীহ বুখারী : ৩২৭৬; স্বহীহ মুসলিম : ১১৩]

‘আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু’। [সূরা ইউনুস , আয়াত : ১০৭]

মহান আল্লাহ্ আমাদের দুঃখ, দূর্দশা লাঘব করুন, হতাশাগ্রস্থ হৃদয়গুলিকে সবর করার শক্তি দিন, দুনিয়ার যাবতীয় বালা-মসিবত থেকে হিফাযত করূন এবং আখিরাতে এর বিনিময়ে চিরসুখের আবাসস্থল দান করুন। আ-মীন ইয়া রা'ব্বাল আ'লামীন।

লেখাঃ আকতার বিন আমীর (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

0 Comments