আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের উপর সিয়ামকে ফরয করেছেন। সিয়াম শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানাপিনা, সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে উপোস রেখে, সহবাস থেকে বিরত রেখে আমাদের কষ্ট দেওয়া উদ্দেশ্য নয়, বরং আমাদের তাক্বওয়া যাচাই করেন। এই সিয়াম শুধু আমাদের উপর ফরয করা হয়নি, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাহের জন্যও ফরয ছিলো। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে এরশাদ ফরমান,
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর। [সূরা বাকারা ১৮৩]
আল্লাহ তা’আলা এটি বলে উম্মাহকে বুঝাতে চেয়েছেন, এই সিয়াম শুধু তোমাদের জন্য ফরয করা হয়নি, যেটা তোমরা কষ্টকর মনে করতেছো, বরং তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাহের জন্যও ফরয ছিলো। ফলে বন্দার জন্য রোযা রাখা সহজ হবে। কেননা, কোন কষ্টকর কাজ সবাই মিলে করলে সেটা সহজ হয়ে যায়, কষ্ট মনে হয় না।
নামায, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি আমলগুলো লোকদেখানো করা যায়, সিয়াম একমাত্র ইবাদাত যেটা লোকদেখানো করা যায় না। অনেকে নামায পড়ে লোকে নামাযী বলার জন্য, অনেকে হজ্ব করে হাজী বলার জন্য, অনেকে যাকাত দেয় দানবীর বলার জন্য। কিন্তু অধিকাংশ লোক রোযা রাখে আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহকে দেখানোর জন্য। যদিও বা কিছু লোক রোযা রাখে লোকদেখানোর জন্য, কিয়দংশ হলেও সে রোযায় তাক্বওয়া থাকে।
কেউ লোকদেখানো রোযা রাখলে মানুষের অগোচরে পানাহার করতে পারে। অযথা সারাদিন উপোস থেকে নিজেকে কষ্ট দিবে কেন? যখনই পানাহার করতে বসে, আল্লাহর ভয়ে পানাহার করে না। কেউ চায়লে পুকুরে ডুব দিয়ে যৎসামান্য পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিতে পারে, কিন্তু এমনটা করে না। কেননা মানুষ না দেখলে কী হবে, আল্লাহ তো দেখছেন। এই ভয়ে মানুষ বিরত থাকে।
এইজন্যই বুঝি রোযার সাওয়াব স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা দিবেন বলেছেন। আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম যেমন নামায, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি তার জন্যই, কিন্তু সিয়াম আল্লাহর জন্যই। এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদিসে আছে, আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোযা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’সুবহানাল্লাহ! এছাড়া হাদিসে আছে, সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। [বুখারি-১৯০৪]
প্রিয় পাঠক! রমাদানের আর কিছুদিন বাকি মাত্র! আমরা রমাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের রমাদানের রোযা রাখার তাওফিক দিন-আমীন!
লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম
0 Comments