যাকে চিনিনা জানিনা, তাকে কিভাবে বিয়ে করবো?


যাকে আমি চিনি না, জানি না, যার সাথে কথা হল না তাকে আমি কিভাবে বিয়ে করব?

যারা প্রেম করে তারা বলে আমরা দুইজনকে বুঝার জন্য, দুজনকে জানার জন্য প্রেম করি যাতে বিয়ের পর একজন আরেকজনকে বুঝতে পারি, সম্পর্কটা মজবুত হয়।

ইসলাম আসলে ব্যাকডেটেড, ইসলাম তো এই সব বুঝে না।

আসলেই ইসলাম হারাম জিনিসটাকে সাপোর্ট করে না, কারন আপনি যত যুক্তিই দেন না কেন ইসলাম যেটাকে হারাম করেছে সেখানে শত চেষ্টা করেও আপনি শান্তি পাবেন না।

বিষয়টি একটা উদাহরণের মাধ্যমে ক্লিয়ার হবে আশা করি "আমার এক ফ্রেন্ড এই দেড় বছরে তিনটা মেয়েকে ভালবেসেছে এবং তিনটা মেয়ের সাথেই ব্রেকআপ হয়েছে"।

প্রতিটি সম্পর্ক শুরু হয়েছিল প্রচুর শেয়ারিং এবং কেয়ারিং এর মাধ্যমে কিন্তু শেষ হয়েছে কোন ঠুনকো একটা কারণ নিয়ে।

কারণ আপনি যখন হারাম সম্পর্কে থাকবেন তখন আপনার মাঝে ভাবনা আসবে তাকে আর ভাললাগে না এখন অন্য আরেকজনের সাথে সময় কাটাই। তার সাথে এখন আর আগের মত ফিলিংস আসে না।

তারা একে অপরকে এতটাই জেনেছে বা বুঝেছে যে, বিয়ে হওয়ার পূর্বেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে।

যদিও এই সম্পর্কগুলোর বিয়ে হয়, ডিভোর্স কিন্তু এই বিয়ের আগে যারা প্রেম করে তাদের সবচেয়ে বেশি হয়। আমি এমন বলব না যে অ্যারেন্জ ম্যারিজ এ বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় না, হয় কিন্তু সেটা অনেক কম।

কারণ তখন দু'জন মানুষ একে অপরের হাতটা ধরে সম্পর্কটা চিরস্থায়ী করার জন্য, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, জাস্ট সময় কাটানোর জন্য নয়, দুজন অপরিচিত মানুষের সেক্রিফাইসের মনমানসিকতা থাকে যে সে আমার দেহের একটা অংশ তার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারব না।

আমার আপনার দাদা-নানারা কি প্রেম করে বিয়ে করেছে তাদের সম্পর্কগুলোর দিকে তাকান কত মজবুত, কত কেয়ারিং একজন আরেকজনের প্রতি। তারাও কিন্তু বিয়ের আগে অপরিচিত ছিল, একজন আরেকজনকে জানে না। কিন্তু তারপরও তাদের সম্পর্কগুলো কত সুন্দর কল্পনা করা যায়। এখন এই ধরনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

এটা তাদের জন্য উদাহরন যারা বলে বিয়ের আগে প্রেম করি এক জন আরেক জনকে বুঝার জন্য, যে অপরিচিত দুজনের সম্পর্কটাই হয় সবচেয়ে সুন্দর এবং মজবুত।

কারন এটা আল্লাহর হালাল পদ্ধতিতে শুরু হয় যেখানে হারামের কোন ছোয়াঁ নাই।যেখানে আল্লাহ রহমত ও বরকত দান করেন।

وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡہَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾

"আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।" (সূরাহ রুম, আয়াত : ২১)

[1] অর্থাৎ তোমাদেরই মধ্যে থেকে নারী জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে তারা তোমাদের স্ত্রী হয় এবং তোমরা এক অপরের সঙ্গী বা জোড়া জোড়া হয়ে যাও। আরবীতে زَوج এর অর্থ হল সঙ্গী বা জোড়া। অতএব পুরুষ নারীর ও নারী পুরুষের সঙ্গী বা জোড়া। নারীদেরকে পুরুষদের মধ্য হতেই সৃষ্টি করার অর্থ হল, পৃথিবীর প্রথম নারী মা হাওয়াকে আদম (আঃ)-এর বাম পার্শেবর (পাঁজরের) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর তাঁদের দুই জন হতে মানুষের জন্মের (স্বাভাবিক) ধারাবাহিকতা আরম্ভ হয়েছে।
[2] অর্থাৎ, যদি পুরুষ ও নারী আলাদা আলাদা বস্তু হতে সৃষ্টি হত; যেমন যদি নারী জ্বিন অথবা চতুষ্পদ জন্তু থেকে সৃষ্টি হত, তাহলে তাদের উভয়ের একই বস্তু হতে সৃষ্টি হওয়াতে যে সুখ-শান্তি পাওয়া যায় তা কখনই পাওয়া সম্ভব হত না। বরং এক অপরকে অপছন্দ করত ও জন্তু জানোয়ারের ন্যায় ব্যবহার করত। সুতরাং মানুষের প্রতি আল্লাহর অশেষ দয়া যে, তিনি মানুষের জুড়ি ও সঙ্গিনী মানুষকেই বানিয়েছেন।

[3] مَوَدَّة এর অর্থ হল স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুমধুর ভালবাসা যা সাধারণত পরিলক্ষিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেরূপ ভালবাসা সৃষ্টি হয় অনুরূপ ভালবাসা পৃথিবীর অন্য কোন দুই ব্যক্তির মাঝে হয় না। আর رَحمَة (মায়া-মমতা) হল এই যে, স্বামী নিজ স্ত্রীকে সর্বপ্রকার সুখ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশ দান করে থাকে। অনুরূপ স্ত্রীও নিজের সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী স্বামীর সেবা করে থাকে। মহান আল্লাহ উভয়ের উপরেই সে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। বলা বাহুল্য, মানুষ এই শান্তি ও অগাধ প্রেম-ভালবাসা সেই দাম্পত্যের মাধ্যমেই লাভ করতে পারে যার সম্পর্কের ভিত্তি শরীয়তসম্মত বিবাহের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। পরন্তু ইসলাম একমাত্র বিবাহসূত্রের মাধ্যমেই সম্পৃক্ত দম্পতিকেই জোড়া বলে স্বীকার করে। অন্যথায় শরীয়ত-বিরোধী দাম্পত্যের (লিভ টুগেদারের) সম্পর্ককে ইসলাম জোড়া বলে স্বীকার করে না। বরং তাদেরকে ব্যভিচারী আখ্যায়িত করে এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করে। আজকাল পাশ্চাত্য সভ্যতার পতাকাবাহী শয়তানরা এই নোংরা প্রচেষ্টায় লিপ্ত যে, পাশ্চাত্য সমাজের মত ইসলামী দেশেও বিবাহকে অপ্রয়োজনীয় স্বীকার করে অনুরূপ (অবৈধ প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ লিভ টুগেদারের) নারী-পুরুষকে জোড়া, যুগল বা দম্পতি (COUPLE) হিসেবে মেনে নেওয়া হোক এবং তাদের জন্য শাস্তির পরিবর্তে ঐ সকল অধিকার দেওয়া ও মেনে নেওয়া হোক, যে অধিকার একজন শরীয়তসম্মত দম্পতি পেয়ে থাকে! (আল্লাহ তাদেরকে সর্বত্রই ধ্বংস করেন।)

এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে "স্বামী স্ত্রীর মাঝে আল্লাহ ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন (স্বামী স্ত্রী হয় বিয়ের পর, বিয়ের আগে না)। আর এখানে দয়া ও ভালবাসার কথা বলা হচ্ছে শুধু মাত্র বিয়ের পরের স্বামী স্ত্রীর মাঝে, আগের নয়"।

তাহলে কেন আপনি চিল্লান যে যাকে চিনি না, জানি না তাকে কেন বিয়ে করব।

যদি এই আয়াতটা মানেন তাহলে এই সব চিন্তা কখনো মাথায় আসবে না। এ বলবেন যে এটা হারাম।

ইসলাম শুধু তাদেরকেই স্বামী স্ত্রী বলছে যারা শরিয়তের নিয়ম কানুন মেনে বিয়ে করেছে। কোন লিভ টুগেদার কাপল কে ইসলাম কখনও বৈধ স্বামী স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি। বরং তাদেরকে ব্যাভিচারি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাদের ক্ষেত্রে কোন দয়া ও রহমত নেই।

একটু ভাবুন, একটু থমকে দাড়ান, তাই অনুরোধ হে ভাই ও বোনেরা যারা এই ধরনের মন-মানসিকতা নিয়ে চলছেন বেরিয়ে আসুন এই সব সম্পর্ক থেকে, ফিরে আসুন আপনার রবের মহা ক্ষমার দিকে। আল্লাহ তায়লা আপনার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন ইন শা আল্লাহ...

সমাপ্ত

লেখাঃ জি এম নেওয়াজ আরিফ (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!) 

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

0 Comments