❒ এক.
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উতসব দূর্গোতসব আসতে চলল। ধর্ম যার যার উতসব সবার নাকি শুধু তার তার এই নিয়ে দ্বন্দে জড়িয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে কাঁপানোর কোন অর্থদ্যোতকতা নেই।
কিছু ব্যাপার স্পষ্ট করা দরকার। ভালভাবে বুঝলে আশা করি আমাদের মাঝে কোন সামাজিক ভেদাভেদ হবে না।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উতসব গুলোর সময় মন্ডপে পূজা দেখতে যাওয়া, উতসব সবার না যার যার ইত্যাদি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ঝড় তো উঠেই।
হিন্দু ভাইরাও মনে করেন আমরা মনে হয় তাদের কে ঘৃনা করি, সংখ্যালঘু হওয়ায় কোন সহমর্মিতা নেই তাদের প্রতি, আমরা যেন এক্সট্রিম সাম্প্রদায়িক। আরে ভাই এইদেশে তো সব থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্র্যাকটিসিং মুসলিমেরা!
আসলে আমরা কিন্তু অসাম্প্রদায়িক। আবার আমরা সাম্প্রদায়িকও। উভয়ই ক্ষেত্র বিশেষে। উভয়ের আলাদা আলাদা ক্ষেত্র আছে। কখন কোন ক্ষেত্রে?
আমরা যেসব ক্ষেত্রে অসম্প্রদায়িক হবো,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ [আবূ দাঊদ, ৩০৫২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে’। [বুখারী, ৩১৬৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিমকে অসময়ে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন’। [আবূ দাঊদ : ২৭৬০; নাসাঈ : ৪৭৪৭]
মহান আল্লাহ বলেন, 'তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’। [সূরাহ আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮]
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন'। [সূরাহ আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি : (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৯৪৩০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’ [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "তোমরা যার যার ধর্ম পালন কর। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেনা। নিজের ধর্ম অন্যের উপর চাপিয়ে দেবে না।" [বিদায় হজ্ব এর ভাষণে]
আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী শুধু হিন্দুই অন্য সকল ধর্মের অনুসারী ভাইদের সর্বদা সাহায্য সহযোগিতা করব সামাজিক ভাবে, আর্থিক ভাবে, নৈতিক ভাবে তাদের যেকোন প্রয়োজনে হক আদায় করব।
এই নব্বই শতাংশ মুসলিম এর দেশে আমরা সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, নতুবা হাশরে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহর কাছে।
এই সব দিক দিয়ে আমরা 'অসাম্প্রদায়িক' হবো।
❒ দুই.
কোরআন কখনও সাম্প্রদায়িকতা কে উসকে দেয়না। যদি উসকে দিত বা দেয়ার প্রবণতা থাকতো তাহলে কোরআনে কেবল মুসলিম সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলা হত, তা হয়নি, বরং কোরআন বার বার সমগ্র মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বিধি নিষেধ গুলো বলা হয়েছে।
কোরআনে শুধু মুসলমান দের কল্যাণের কথা বলা হয়নি, সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। বার বার আল্লাহ তায়ালা সম্বোধন করেছেন, ইয়া আইয়্যুহান নাস- (হে মানবজাতি)... এইভাবে।
তবে শিরক থেকে বেচে থাকার ব্যাপারে আমরা সাম্প্রদায়িক হবো, শুধু সাম্প্রদায়িক নয়, কঠোর ভাবে সাম্প্রদায়িক হবো।
যে অসাম্প্রদায়িকতা আমাদেরকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে, আল্লাহ্ এর নফরনামি করাবে, জাহান্নামে প্রবেশ করাবে সেই ক্ষেত্রে আমরা সাম্প্রদায়িক হবো।
আমরা সেখানে যাবো না যেখানে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাসনা করা হচ্ছে, আমরা সেই খাবার খাবো না যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারোর নামে উতসর্গ করা হয়, আমরা সেই সব উতসবে সামিল হবো না যেখানে আল্লাহ্ এর গজব বর্ষিত হতে থাকে আর যা আমাদের জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
যে আল্লাহ'র কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে সে আল্লাহর ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ শিরক হতে আমরা যেকোন মুল্যে গা বাঁচিয়ে চলব, তাতে পার্থিব কোন সম্পর্ক যদি নষ্ট হয় তো হোক।
যে ধর্মের অনুসারী দের গরু খাওয়া মানা তাদের জোর করে যদি গরু খাওইয়ে ধর্মানুভুতিতে আঘাত করার অধিকার আমাদের নাই, এটা অত্যাচার।
উতসবে শরীক হলে আমাদের শুধু ধর্মানুভুতিতে আঘাত আসেনা, রীতিমত শিরক হয়, আমাদের ধর্মে সকল ধরনের পাপাচারের থেকেও জঘন্য শিরক এর পাপ, তাই আমরাও শিরক থেকে বেচে থাকতে পছন্দ করি। আমরা শুভেচ্ছা জানাতে যেয়ে নিজ ধর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে পারব না।
এবং আশা করি হিন্দু ভাইরাও এগুলো জানার পরে আমাদের আমন্ত্রন জানাবেন না।
আল্লাহ্ সকল মুসলিম কে অমুসলিম হিন্দু ভাইদের সাথে ইনসাফ করার ব্যাপারে হেদায়াত দিন, একই সাথে উতসবে শরীক হবার মাধ্যমে শিরকের মত অক্ষমাযোগ্য ভয়াবহ পাপ থেকেও বেঁচে থাকার ব্যাপারে অনুগ্রহ করুন।
আমীন।
সমাপ্ত
লেখাঃ শাহ মোহাম্মদ তন্ময় (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!
0 Comments