ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এ প্রসঙ্গে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এ প্রসঙ্গে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং

ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তলব অনুযায়ী কাজ করার নাম হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। এ জগতে হাজার হাজার কাজ আছে। সেগুলো থেকে যদি আপনি কিছু শর্ত সাপেক্ষে হালাল কর্মের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন তাহলে নি:সন্দেহে তা হালাল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ عليه السلام كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ». رواه البخاري

‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায় নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’(সহীহুল বুখারী ২০৭২, ইবনু মাজাহ ২১৩৮, আহমাদ ১৬৭২৯, ১৫৭৩৯)

তবে সর্বদা হালাল-হারামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

«إنَّ الحَلاَلَ بَيِّنٌ، وَإنَّ الحَرامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِينهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ

‘‘অবশ্যই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুটির মাঝখানে রয়েছে কিছু সন্দেহপূর্ণ বস্তু; যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দেহপূর্ণ বিষয় সমূহ হতে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করবে এবং যে সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে পতিত হবে সে হারামে পতিত হবে।” (সহীহুল বুখারী ৫২, ২০৫১, মুসলিম ১৫৯৯)

মোটকথা, কাজের উপর নির্ভর করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ।

এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, যদি আপনি এমন কাজ করেন যেটা মূলত শরিয়তে হালাল-যাতে হারামের সংস্পর্শ নাই তাহলে তা হালাল এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থও হালাল আর যদি কাজটা হারাম হয় তাহলে তা করা হারাম এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থও হারাম।

ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের শর্তাবলী:

কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ফ্রিল্যান্সিং করা এবং তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা বৈধ। যথা:

• ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কাজটি হালাল হওয়া (হারাম না হওয়া)।
• দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থী না হওয়া।
• মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতি কারক না হওয়া।
• কারো অধিকার খর্ব না করা। (যেমন: কপিরাইট লঙ্ঘন করা)।
• আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদ, ঘুস বা দুর্নীতির আশ্রয় না নেয়া।
• মিথ্যা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া ইত্যাদি।

যদিও এগুলো অনলাইন-অফলাইন সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু অনলাইনে
আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রতারণা ও অন্যায়-অপকর্মের সুযোগ বেশি থাকে।

কয়েকটি উদাহরণ:

◈ গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্সে ডিজাইনে যদি কোন অশ্লীলতা না থাকে এবং পুরুষ-মহিলা বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি যুক্ত করা না করা হয় বা কপিরাইট কৃত কোন ছবি ব্যবহার না করা হয় তাহলে তা হালাল; অন্যথায় হারাম।

◈ ডাটা এন্ট্রি বা (লেখা)। এতে যদি শরিয়ত বিরোধী কিছু না থাকে তাহলে কোন আপত্তি নাই; অন্যথায় হারাম। যেমন: কোনো লেখকের কপি রাইট কৃত বই থেকে নকল করা, নাস্তিকতা ও ইসলাম বিরোধী প্রপাগাণ্ডা মূলক লেখা, অবৈধ প্রেমভালবাসা ও নোংরা-সেক্সুয়াল বিষয়ে লেখা ইত্যাদি। এগুলো লিখে অনলাইনে পয়সা কামানো হারাম।

◈ অনলাইন ভিত্তিক সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ/বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা। পণ্যটি যদি হালাল হয় তাহলে তা হালাল কিন্তু পণ্যটি হারাম হলে তা অবশ্যই হারাম। যেমন: মদ-নেশা, বিড়ি-সিগারেট, মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক, খাঁটি পণ্যের লেভেল লাগানো নকল পণ্য, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ইত্যাদি। এগুলো অনলাইনে বিক্রয় সেবা দিয়ে পয়সা কামানো হালাল নয়।

এভাবে হালাল-হারামের বিষয়টি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, SCO, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), প্রশাসনিক সহায়তা, মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা (Customer Service) ইত্যাদি যতপ্রকার কাজ আছে সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আল্লাহু আলাম।

মহান আল্লাহ আামাদেরকে বৈধ পন্থায় কাজ করে অর্থ উপর্জন করার এবং সকল প্রকার হারাম ও অসদুপায় অবলম্বন থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
সমাপ্ত

লেখাঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

পোস্ট রেটিং করুন

আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

সম্পর্কিত পোস্টসমূহ

Facebook