তোমরা তাদের মত হয়ো না


লেখাঃ শেইখ গুলশান আরা মোহিত (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

আপনি নিজের অন্তরের শান্তির জন্যে নানারকম হারাম কাজ করেন, আনন্দ-উল্লাস করেন। সত্যিই কি হারাম কাজ গুলো করে আপনার আনন্দ অনুভূত হয়? নাকি অজানা এক গ্লানি, কষ্ট আপনার মনে ভার করে। আপনি যে ক্ষণিকের আনন্দের জন্য আপনার মালিক আল্লাহ্'র অবাধ্যতা করছেন, হারাম কাজ করছেন; সেই অবাধ্যতা গুলোই আপনাকে চির কষ্টের জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনে নিক্ষেপ করবে।

মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,

يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ

"তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মাঝখানে প্রদক্ষিণ করবে।" (সূরাহ আর রহমান, আয়াত : ৪৪)

একটু চিন্তা করুন এই হারাম কাজ গুলো আপনাকে হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য আনন্দ দেয় কিন্তু আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করাতে পারে না। একমাত্র আল্লাহ্'র ইবাদতের মাধ্যমেই আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন। আল্লাহ্'র ইবাদতের মাধ্যমেই দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে শান্তি লাভ করা সম্ভব; পুরস্কার হিসেবে আপনাকে দেওয়া হবে চিরস্থায়ী জান্নাত যেখানে শুধু রয়েছে শান্তি।

মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন,

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ

"তারা সবুজ মসনদে এবং উৎকৃষ্ট মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে।" (সূরাহ আর রহমান, আয়াত : ৭৬)

আপনার অন্তরেরও ক্ষুধা রয়েছে সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্যে, অন্তরের পরিপূর্ণতার জন্যে, অন্তরের প্রশান্তির জন্যে প্রয়োজন আল্লাহ্'র ইবাদত। আল্লাহ্'র ইবাদতে যে শান্তি রয়েছে, তা আর অন্য কোন কিছুতেই কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ্ আপনাকে সৃষ্টিই করেছেন তার ইবাদতের উদ্দেশ্যে, আর তাই আল্লাহ্'র ইবাদতেই রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি। আল্লাহ্'র অবাধ্য হয়ে হারাম কাজে শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। যে আল্লাহ্'র ইবাদত করে না, সে একসময় নিজেকে ভুলে যায়; নিজেকে স্মরণ করতে পারে না। সে ভুলে যায় যে তার জীবনের উদ্দেশ্যেই হলো আল্লাহ্'র ইবাদত করা। কারণ আল্লাহ্ তা'আলা তাকে আত্ম বিস্মৃত করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ যাকে আত্ম বিস্মৃত করে দিয়েছেন নিশ্চয় সে ক্ষতিগ্রস্ত।

মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন,

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

"তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে আত্ন বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।" (সূরাহ হাশর, আয়াত : ১৯)

আপনার কি একটুও মনে হয় না, যে যত দিন যাচ্ছে তত আপনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হয়ত আপনি ভালো হয়ে যেতে চাইছিলেন, হয়তো ভাবছিলেন তাওবাহ করবেন কিন্তু মৃত্যু আপনার কাছে আকস্মিক ভাবে চলে এসেছে; হয়তো আপনি আর তাওবাহ করার সুযোগ পাবেন না। কারণ মৃত্যু কখনো সতর্কবাণী দিয়ে আসবে না, মৃত্যু আপনার জন্যে অপেক্ষা করবে না; সে অপ্রত্যাশিত ভাবেই আপনার সামনে উপস্থিত হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না কখন, কোথায় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।" (সূরাহ লোকমান, আয়াত : ৩৪)

যেহেতু আপনি এখনো বেঁচে আছেন সেহেতু আজকেই, এখনি আল্লাহ্'র কাছে আত্মসমর্পণ করুন; এখনি আল্লাহ্'র কাছে তাওবাহ করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাওবাহকারীকে ক্ষমা করে দেন; নিশ্চয় আল্লাহ্ তাওবাহকারীকে ভালবাসেন; নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল অসীম দয়ালু।

আজ থেকেই আপনার জীবনের উদ্দেশ্যে অর্জনের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করুন; আপনাকে সৃষ্টি যেহেতু আল্লাহ্ করেছেন সেহেতু তার ইবাদতই করুন। শুধু মাত্র আল্লাহ্'র জন্যেই বাঁচুন।

হে আল্লাহ্ আমাদেরকে আপনার ইবাদত করার এবং সরল পথে চলার তৌফিক দান করুন।

وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

বলুনঃ "হে আমার পালনকর্তা! ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ঠ রহমকারী।" (সূরাহ মু'মিনূন, আয়াত : ১১৮)
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক ইন শা আল্লাহ ’ লেখাটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে!

Post a Comment

1 Comments